পাওনা টাকা ফিরে পাওয়ার দাবিতে অসুস্থ বাবাকে সাথে নিয়ে বিজেপি নেতার বাড়ীতে ধর্ণা,চাঞ্চল্য সিমলাপালে।
বাঁকুড়া২৪X৭প্রতিবেদন : পাওনা টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে অসুস্থ বাবাকে সাথে নিয়ে এক বিজেপি নেতার বাড়ীর সামনে ধরেণায় বসলেন এক বিজেপি কর্মী।বাঁকুড়ার সিমলাপাল থানার গোপালনগর গ্রামে এই ঘটনার জেরে শনিবার সকালে ব্যপক চাঞ্চল্য ছড়ায়। এদিন সকালে অসুস্থ বাবাকে সাথে নিয়ে প্ল্যাকার্ড হাতে বিজেপির সিমলাপাল মন্ডল ১ এর সম্পাদক পুলকেশ পাত্রের বাড়ির সামনে ধর্ণায় মনসা সিংহ মহাপাত্র নামে ওই যুবক।
ধর্ণারত দু'জনের হাতেই ছিল প্ল্যাকার্ড। তাতে লেখা পুলকেশ পাত্রের উদ্যেশ্য করে লেখাছিল "'আমার অসুস্থ পিতার চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকার দরকার।আপনার দুঃসময়ে আমি আপনাকে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার টাকা দিয়েছিলাম।সেই টাকা কোনও অজুহাত ছাড়া দয়া করে ফেরত দিন।অসময়ে আমার পাশে দাঁড়িয়ে মানবিকতার মূল্য দিন।" পাশাপাশি,ওই টাকা
ফেরত না পেলে মনসা প্রাণ ত্যাগ করবেন বলেও হুমকীর বার্তা দেন প্ল্যাকার্ডে। এই ঘটনার খবর চাউর হতেই সিমলাপাল ব্লক জুড়ে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়ে যায়। এদিকে যার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সেই পুলকেশ বাবু টাকা নেওয়ার ঘটনা স্বীকার করলেও তিনি দাবী করেন যে, তিনি পুরো টাকা সুদ আসলে বহুদিন আগেই শোধ করে দিয়েছেন।অন্যদিকে, ধর্ণায় বসা মনসার পালটা দাবী, সিমলাপালের গোপালনগর গ্রামের বাসিন্দা ও বিজেপি নেতা পুলকেশ পাত্র লটারির ব্যবসা করতেন। আর লটারির টিকিট বিক্রি করতেন তিনি। বছর দুই আগে লটারির ব্যবসায় টাকা লাগানোর কথা বলেই পুলকেশ তার কাছ থেকে এক লক্ষ চব্বিশ হাজার টাকা ধার নেন। এবং ব্যবসায় লাভের একটা অংশ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কথা রাখেননি।ইতি মধ্যে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়।
মনসাও লটারির টিকিট বিক্রি ছেড়ে দেন। কিন্তু বারে বারে পাওনা টাকা চাইলেও টাকা ফেরত না পাওয়ায় ধর্ণায় বসতে বাধ্য হন। পাশাপাশি মনসার বৃদ্ধ বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ায় এখন টাকা খুবই জরুরি হয়ে পড়ে। বাইরে নিয়ে গিয়ে তাঁর চিকিৎসার জন্য প্রচুর টাকার দরকার। তাই পাওনা টাকা না মেলায় এদিন সকালে ঘন্টা চারেক ধর্ণার বসে মনসা। যদিও এরপর বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরে যায় সে।তবে যেহেতু টাকা পাননি, তাই রবিবার থেকে লাগাতার ধর্ণায় বসারও হুমকী দিয়ে রেখেছেন তিনি
এদিকে,বিজেপি নেতা পুলকেশ পাত্রের আরও দাবী, ওই যুবক বিজেপির কর্মী নন।উনি সুদের কারবার করেন।দু'বছর নয়।পাঁচ বছর আগেওঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েলেও তা সুদে আসলে মোট ৩ লক্ষ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা ফেরত দিয়েছি।কবেই সব টাকা মিটে গিয়েছে। তার নামে কুৎসা রটাতেই এই ধর্ণার নাটক চলছে। আর তৃণমূল এসবে মদত দিচ্ছে। যদিও মনসা বাবু সাফ জানিয়েছেন, তার সাথে তৃণমূলের কোন যোগ নেই। আর তিনি সুদের কারবারিও নন। তার পাওনা টাকা আদায়ের জন্য তিনি লড়াই চালিয়ে যাবেন বলে পণ করেছেন।
কার্যত, এই ঘটনা নিয়ে চাপান উতোর চলছে পুরোদমে। বিজেপি নেতা পুলকেশ পাত্রও মনসার নামে পালটা মানহানির মামলা করার হুমকী দিয়েছেন। এই অবস্থায় বিধানসভা ভোটের আগে সিমলাপালের রাজনৈতিক মহলেও এখন এই ধর্ণা আলোচনার খোরাক যোগাচ্ছে তা বলাই বাহুল্য।
অন্যদিকে, বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র জানান,তিনি এই ঘটনার প্রকৃত কিছু জানেন না। পুরো ঘটনা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে তিনি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে, সিমলাপালের তৃণমূল নেতা তথা জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি রামানুজ সিংহ মহাপাত্র জানিয়েছেন, এই ধর্ণা ওই যুবকের সাথে বিজেপি নেতার ব্যক্তিগত বিষয়। এর মধ্যে তৃণমূলের কোন যোগ নেই। তা ছাড়া মনসাকেও তিনি চেনেন না। আর সে তৃণমূলের কোন কর্মী বা সমর্থক নয়। বরং 'সে' বিজেপি কর্মী বলেই দাবী করেছে বলে শুনেছি। বিজেপির ওই নেতা নিজের দোষ ঢাকতে এখন তৃণমূলের দিকে মিথ্যে অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার অপচেষ্টা করছেন। কিন্তু মানুষ সব জানেন। তাদের কাছে সব জলের মতো স্বচ্ছ হয়ে গেছে।