মহালয়ার তর্পণের সাথে কিসের যোগ রামায়ণ,মহাভারতের?জেনে নিন সেই কাহিনি।
পুরাণ মতে,ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ১৫ দিন মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসনে। এই সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করা হলে তা সহজেই তাদের কাছে পৌছয় বলে বিশ্বাস। ফলে,গোটা পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষদেব স্মরণ ও মননের মাধ্যমে তর্পণ করা হয়। আর এই তর্পণের শেষ দিনের মহালগ্নই হল মহালয়া।
বাঁকুড়া২৪x৭প্রতিবেদন : আজ মহালয়া,পিতৃ পক্ষের আবসান এবং দেবীপক্ষের সূচনা।আকাশে,বাতাসে আগমণীর সুর। মহলয়ায় ভোর থেকেই বাঁকুড়া জেলার নদী গুলিতে তর্পণের ভীড়। পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে এদিন জল দান করা হয়।এই পিতৃতর্পনের সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের দুই মহাকাব্য রামায়ণ ও মহাভারতের কাহিনি।কথিত আছে,রামায়ণের রামচন্দ্র মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেছিলেন। অনেকে মনেকরেন তারপর থেকেই পিতৃতর্পণের প্রচলন হয়। অন্য একটি প্রচলিত কাহিনির যোগ রয়েছে মহাভারতের অন্যতম চরিত্র কর্ণের সাথে। কাহিনীতে বলা হয় যে, কর্ণ চিরকাল মানুষকে স্বর্ণ,রত্ন ইত্যাদি দান করে গেছেন।
কিন্তু,তিনি কোন দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল বা খাদ্য দান করেননি। কারণ তিনি নিজের পিতৃপুরুষের পরিচয় জানতেন না। তবে এটা ছিল কর্ণের অনিচ্ছাকৃত একটা ভুল। আর এই ভুলের মাশুল দিতে হয় যখন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর মহাবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে যায়। সেখানে তাঁকে খেতে দেওয়া হয় শুধুই সোনা,দানা আর ধনরত্ন। তখন কর্ণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।এবং কারণ জিজ্ঞাসা করেন দেবরাজ ইন্দ্রকে। উত্তরে ইন্দ্র কর্ণকে বললেন,যে,কর্ণ সারাজীবন মানুষকে সোনাদানাই দান করেছেন কিন্তু পিতৃপুরুষকে জল দেননি।তাই তাঁকে এই ফল ভোগ করতে হচ্ছে। তখন কর্ণ দেবরাজ ইন্দ্রকে তাঁর অনিচ্ছকৃত ভুলের কথা জানানা।
এবং ইন্দ্র কর্ণকে তার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে এক পক্ষকালের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দানের পরামর্শ দেন। ইন্দ্রের কথা মতো এক পক্ষকাল ধরে কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করেন এবং তাঁর পিতৃপুরুষকে অন্ন ও জল দান করেন । এর ফলে কর্ণের পাপ স্খলন হয়।এবং যে পক্ষকাল কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃপুরুষকে জল দান করেন সেই পক্ষটিই পরিচিতি পায় পিতৃপক্ষ নামে। এবং সেই থেকে তর্পণের প্রচলন হয় মর্তে এমনটাও আনেকের বিশ্বাস। তর্পণের প্রচলণ নিয়ে ভিন্ন,ভিন্ন মত থাকলেও আজ মহালয়ার দিন তর্পণের মাধ্যমে জল দান করেন অগনিত মানুষ।
জেলার নদ নদী এবং জলাশয় গুলিতে পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল দান পর্ব। ভাদ্র মাসের কৃষ্ণ প্রতিপদ শুরুর পর থেকে পরবর্তী অমাবস্যা পর্যন্ত সময়কে পিতৃপক্ষ হিসেবে ধরা হয়। পুরাণ মতে,ব্রহ্মার নির্দেশে পিতৃপুরুষরা এই ১৫ দিন মনুষ্যলোকের কাছাকাছি চলে আসনে। তাই এই সময় তাঁদের উদ্দেশ্যে কিছু অর্পণ করা হলে তা সহজেই তাদের কাছে পৌছয় বলে বিশ্বাস। ফলে,গোটা পক্ষকাল ধরে পিতৃপুরুষদেব স্মরণ ও মননের মাধ্যমে তর্পণ করা হয়। আর এই তর্পণের শেষ দিনের মহালগ্নই হল মহালয়া,পিতৃপক্ষের শেষ দিন। পরের দিন শুক্লা প্রতিপদে দেবীপক্ষের সূচনা হয়।
তারপর থেকে কোজাগরী লক্ষী পূর্ণিমা পর্যন্ত ১৫ দিন হল দেবীপক্ষ।
👁️🗨️দেখুন🎦ভিডিও।👇