মল্লভুম বিষ্ণুপুর

নিজের দেশেই বিদেশী ঘোষিত বিষ্ণুপুরের গঙ্গাধর প্রামাণিক, চার বছর অসমের জেলে কাটিয়ে সিজেপির তৎপরতায় ফিরলেন বাড়ি।

গঙ্গাধরের কাছে ভোটার কার্ড, আধার কার্ডের আসল কপি ছিল না।নথির পাশাপাশি নাগরিক হিসেবে নিজেকে জাহির করতে সাক্ষীও লাগে ট্রাইবুনালে। গঙ্গাধরের পক্ষে সাক্ষী জোগাড় করাও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই ট্রাইবুনালের একতরফা রায়ে গঙ্গাধর বিদেশি হিসেবেই ঘোষিত হন। ফলে তার ঠাঁই হয় ডিটেনশন শিবিরে।

নিজের দেশেই বিদেশী ঘোষিত বিষ্ণুপুরের গঙ্গাধর প্রামাণিক, চার বছর অসমের জেলে কাটিয়ে সিজেপির তৎপরতায় ফিরলেন বাড়ি।
X

বাঁকুড়া২৪X৭প্রতিবেদন : কাজের খোঁজে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরের রাধানগর গ্রাম থেকে অসমে পাড়ি দিয়েছিলেন গঙ্গাধর প্রামাণিক নামে এক যুবক। সেটা আজ থেকে প্রায় বছর পাঁচ আগের ২০১৬ সালের ঘটনা। কিন্তু রুজিরুটির জোগাড়ে গিয়ে নিজের দেশে বিদেশীর পরিচয়ে তাকে বন্দি থাকতে হবে এমনটা তিনি কোনদিনই ভাবেন নি। কিন্তু তার ভাগ্যের পরিহাসে অসমের গোয়ালপাড়া ডিটেনশন শিবিরে চার বছর বন্দি থাকতে হল। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে তার ঠাঁই হয় এই শিবিরে। কারন ওই সময় অসম সীমান্ত শাখার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে যান গঙ্গাধর।তার মুখে বাংলা কথা শুনে অসম পুলিশের সন্দেহ হয় গঙ্গাধর বাংলাদেশী। এরপরই তাকে কেস দিয়ে (কেস নাম্বারঃ ৮৮২/২০১৬) বিদেশী সন্দেহে ফরেনার্স ট্রাইবুনালে পাঠানো হয়।

কিন্তু ট্রাইবুনালে সে, নিজেকে ভারতের নাগরিক হিসেবে যথেষ্ট প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি। কারণ তার কাছে ভোটার কার্ড বা আধার কার্ডের আসল কপি ছিল না।নথির পাশাপাশি নাগরিক হিসেবে নিজেকে জাহির করতে সাক্ষীও লাগে ট্রাইবুনালে। সুদুর বাঁকুড়া থেকে অসম পাড়ি দেওয়া গঙ্গাধরের পক্ষে সাক্ষী জোগাড় করা স্বাভাবিক ভাবেই সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই ট্রাইবুনালের একতরফা রায়ে গঙ্গাধর বিদেশি হিসেবেই ঘোষিত হন। ফলে ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর থেকে তার ঠাঁই হয় ডিটেনশন শিবিরে। এদিকে,বাড়ির লোকজনও কোন খোঁজ খবর পাননি ছেলের। বন্দি দশায় গঙ্গাধরও নিজের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার কোন উপায় খুঁজে পাননি।

তবে, শিবিরে আন্যান্য বন্দিদের সাথে গঙ্গাধর তার বাড়ী,মা,বাবা, বোনের কথা বলতেন। বাড়ী ফেরার ইচ্ছের কথাও বলতেন । এমনই দুই বন্দি ছাড়া পাওয়ার পর এবছরের জুলাই মাসে তাদের মুখে গঙ্গাধরে কথা জানতে পারে একটি স্বেচ্ছাসেবী মানবাধিকার সংগঠন সিটিজেনস ফর জাস্টিস এন্ড পিস। এই সংগঠন গঙ্গাধরের হয়ে মামলা লড়ে। ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্টের বির্দেশে দুই বছরের বেশী ডিটেনশন শিবিরে বন্দি আছেন এমন আবাসিকদের শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ার কাজ শুরু করে অসম সরকার। শর্ত অনুয়ায়ী দুই জামিনদার জোগাড় করা,এবং নিকটবর্তী থানায় হাজিরার ব্যবস্থা করা বাধ্যতামূলক। এই শর্ত পুরণে এবার ঝাঁপিয়ে পড়েন সিজেপির অসমের কো-অর্ডিনেটর নন্দ ঘোষ।

তিনি গঙ্গাধরের বাড়ীর লোকের খোঁজ শুরু করেন। অনেক কষ্টে গঙ্গাধরের এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের মাধ্যমে জানতে পারেন গঙ্গাধরের বাবা মন্টু প্রামানিক মারা যাওয়ার পর গঙ্গাধরের মা তার বোনের বাড়িতে থাকেন। এবার তার মা ও বোনের সাথে যোগাযোগ করা হয়। গঙ্গাধরকে ফিরে পাবার আনন্দে আত্মহারা তার মা ও বোন।


তবে তারই মধ্যে বেদনার গঙ্গাধরের ফিরে আসার ঘটনা না দেখেই চলে গেছে তার বাবা মন্টু বাবু। ইতিমধ্যে তিন জামিনদার জোগাড় করে এবং গঙ্গাধর তার নিকটবর্তী থানা বিষ্ণুপুরে নিয়মিত হাজিরা দেবেন এই শর্ত পুরণ করে ফরেনার্স ট্রাইবুনালের থেকে জামিনে মুক্তির অনুমতি আদায় করে সিজেপি। এরপরই বছর ৩৩ এর গঙ্গাধরকে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে অসমের ডিটেনশন শিবির থেকে মুক্ত করে বিষ্ণুপুরের রাধানগর গ্রামে ফেরাচ্ছেন সিজেপির অসমের কর্মকর্তা নন্দ ঘোষ।

তিনি বিষ্ণুপুরে এসে থানায় সাপ্তাহিক হাজিরা বিষয়েও কথা বলবেন বলে জানান। আজ দুপুরে তারা বিষ্ণুপুরে পৌঁছেছেন এমনটাই জানা গেছে। এদিকে গঙ্গাধরকে তার পরিবারের হাতে তুলে দিতে পেরে খুশী সিজেপির কর্মকর্তারাও।



Next Story