করোনা আতঙ্কে বাড়ীর কচিকাঁচা থেকে আপনার নিজের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখবেন কি ভাবে? জানাচ্ছেন বিশিষ্ট মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরিত্র চক্রবর্তী।
#বাঁকুড়া২৪X৭প্রতিবেদন :গত কায়েক সপ্তাহে জনমানসে ছড়িয়ে পড়া সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম হল" নভেল করোনা ভাইরাস " বা "কোভিড 19"।যাঁরা আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা এবং তাঁদের পারিপার্শ্বিক মানুষজন তো বটেই,বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা দেশেই এক আতঙ্কের পরিবেশ,সংক্রমিত হবার ভয় কাজ করছে।বার বার উপযুক্ত ভাবে হাত ধোওয়া,মাস্কের যুক্তিযুক্ত ব্যবহারের সাথে সাথে যথাসম্ভব বাড়ি থেকে না বেরোনোর পদ্ধতি অবলম্বন করে আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্তির পথ খুঁজছি।একদিকে নভেল করোনার আতঙ্ক আর অন্যদিকে টানা বাড়িতেই সময় কাটানো-এই দুটি বিষয় আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরেও প্রভাব ফেলছে।যেহেতু এই সমস্যা ভয়ঙ্কর,অজানা,হঠাৎ করে সৃষ্টি হওয়া,সঠিক চিকিৎসাপদ্ধতি নিয়ে ধোঁয়াশা আছে,তাই যে কোন ব্যক্তিরই মনে উদ্বিগ্নতার সমস্যা তৈরি হওয়া খুব স্বাভাবিক।কিছু নিয়ম মেনে চলতে পারলে হয়তো আমরা এই সমস্ত মানসিক সমস্যাগুলোর সফল ভাবে মোকাবিলা করতে পারবো-
প্রথমতঃ সংবাদ মাধ্যমে এখন সারাদিন জুড়েই করোনার খবর।সারাদিন এই জাতীয় খবর দেখলে মনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।তাই দীর্ঘ সময় ধরে এই জাতীয় খবর না দেখাই ভাল।দিনে এক থেকে দু ঘন্টার বেশি এই জাতীয় খবর না শোনাই ভাল।দরকার হলে বাড়ির মধ্যে যিনি সবচেয়ে দৃঢ় মানসিকতার তাকেই তথ্য সংগ্রহের দায়িত্ব দিন।
দ্বিতীয়তঃ সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেসবুক,হোয়াটসএপ ইত্যাদিতে ঠিক খবরের সাথে সাথে অনেক ভুল তথ্য ও গুজব ছড়িয়ে পড়ে।এই জাতীয় গুজব মানসিক শান্তি বিঘ্নিত করতে পারে।সুতরাং বুঝতে হবে সোশ্যাল মিডিয়ার সমস্ত তথ্যই সত্যি নয়।বিশ্বাসযোগ্য সূত্র বা ব্যক্তির থেকে প্রাপ্ত ও সরকারি তথ্য গুলিকেই বেশি গুরুত্ব দিন।
তৃতীয়তঃ অনেক সময় উদ্বিগ্নতা কাটাতে অনেকে বিভিন্ন নেশার আশ্রয় নেন যেমন সিগারেট খাওয়া,মদ্য পান ইত্যাদি।এই পরিস্থিতিতে অবশ্যই নেশা করা উচিত নয়।নেশা করলে যে আমাদের মানসিক স্থিরতা বিঘ্নিত হবে তা নয়,এই জাতীয় নেশাগুলি করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও অনেকটা কমিয়ে দেয়।
চতুর্থত: অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না যে কিভাবে সারাদিন বাড়িতে কাটাবেন।পুরানো অভ্যাসগুলোকে ফিরিয়ে আনুন।গল্পের বই পড়া,গান শোনা বা করা,রান্না করা,লেখা- লেখি,ছবি আঁকার মাধ্যমে অনেকটা সময় কাটানো যেতে পারে।এছাড়া এখন সহজেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানান সিনেমা,সিরিয়াল,ওয়েব সিরিজ ইত্যাদি দেখে সহজেই সময় কাটানো সম্ভব।
পঞ্চমত : বিভিন্ন কারণে বা কাজের তাগিদে অনেকেই বাড়িতে সময় দিতে পারতেন না।গৃহবন্দি অবস্থায় হাতে অনেক সময় ।সেই সময়ে নিজের ও পরিবারের যত্ন নিন। যাঁরা দূরে থাকেন তাঁদের সাথে টেলিফোন বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ রাখুন।
ষষ্ঠত: এই পরিস্থিতিতে অনেকেরই ঘুমের সমস্যা দেখা যেতে পারে।ঘুমের কিছু নিয়ম(স্লীপ হাইজিন) মেনে চললে এই সমস্যা এড়ানো যেতে পারে।যেমন-
প্রত্যেকদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোতে যাওয়া ও একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করা, ঘুমের জন্য আলো ও শব্দ মুক্ত আরামদায়ক বিছানা ,
ঘুমোতে যাবার চার থেকে ছয় ঘন্টা আগের সময়ে চা,কফি,কোল্ড ড্রিংকস,চকলেট,সিগারেট ,মদ না খাওয়া ,
বিছানা শুধুমাত্র ঘুমোনোর জন্যই ব্যবহার করা, দিনের বেলা না ঘুমোনো বা এক ঘন্টার কম সময়ের জন্য ঘুমোনো,
ঘুম না এলেও ঘড়িতে সময় না দেখা,
নিয়মমতো রোজ ব্যায়াম করা ,পুষ্টিকর খাবার খাওয়া ,ঘুমোনোর আগে গান শোনা ইত্যাদি ভাল ঘুম হবার গুরুত্বপূর্ন শর্ত।
সপ্তমত: এই পরিস্থিতিতে বাড়ির বাচ্চাদের সামলানো বোধ হয় সবচেয়ে মুশকিল।তাই এই সময়ের জন্য ওদের একটা নতুন রুটিন বানিয়ে দিতে পারেন।শিশুদের কথা মন দিয়ে শুনুন ও তাদের মত করে উত্তর দেবার চেষ্টা করুন।খেয়াল রাখুন যাতে করে শিশুরা তাদের বাবা-মা ও পরিবারের সাথে বেশিরভাগ সময় কাটাতে পারে। পরিবারের লোকজন ওদের সাথে যতটা পারেন সময় কাটান,ওদের খেলায় (ইনডোর গেমস)অংশগ্রহন করুন, ওদের সাথে কার্টুন,সিনেমা,সিরিয়াল দেখুন।
বাচ্চাদেরকে অহেতুক ভয় দেখবেন না,আস্বস্ত করুন।শিশুদের বয়স অনুযায়ী তাকে সত্যটা তার মত করে জানান।বাচ্চাদের সামনে খুব ভয়ের কোন আলোচনা না করাই ভাল।
অষ্টমত: বিভিন্ন ফিসিক্যাল এক্সারসাইজ, রিলাক্সেশান টেকনিক , ডিপ ব্রিথিং,প্রাণায়াম ইত্যাদি করতে পারেন।এতে সময় যেমন কাটবে,তেমনি শরীর ও মন ভাল থাকবে।
নবমত : যাঁদের কোন শারীরিক বা মানসিক সমস্যা আছে তাঁরা তাঁদের ঔষধ কোন ভাবেই বন্ধ করবেন না। দরকারে চিকিৎসকের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ করুন।
দশমত: অহেতুক সোশ্যাল মিডিয়ার কথা শুনে ঔষধ খাবেন না,অহেতুক ঘুমের ঔষধ বা উদ্বিগ্নতা কমানোর ঔষধও খাবেন না।
খুব সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মনে রাখুন এই পরিস্থিতিতে সামান্য উদ্বিগ্ন হওয়া খুবই স্বাভাবিক এবং ঠিকমত মানিয়ে নিতে পারলে তা অবশ্যই কেটে যাবে।
দেশে বা বিশ্বে মহামারী যে এই প্রথমবার এসেছে তা নয়।এর আগেও প্লেগ,কলেরা,স্মল পক্স ইত্যাদি অনেক মহামারী এসেছে।কিন্তু জীবন থেমে থাকে নি।আশা করি আমরাও খুব তাড়াতাড়ি এই দুঃসময় ,এই অন্ধকার কাটিয়ে উঠবো।
#দেখুন 🎦 ভিডিও। 👇[embed]