দ্বাদশীর মধ্যরাতে রাবন কাটা নাচের মধ্য দিয়ে রাবন বধ মল্লভূম বিষ্ণুপুরে।
#বাঁকুড়া২৪X৭প্রতিবেদন : দ্বাদশীতে রাবনকাটা নাচের মধ্য দিয়ে রাবনের মুন্ডুচ্ছেদেই মল্লভূম বিষ্ণুপুরে শারদোৎসবের সমাপ্তি। আজ বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে রাবন কাটা নিত্য দলের আন্যতম কুশীলব বীর হনুমান তরোয়াল দিয়ে রাবনের মুন্ডু কাটতেই মাটির তৈরী রাবনের দেহাবশেষের একটু মাটি নিতে হুড়োহুড়ি পড়ে যাবে! মল্লভূমবাসীদের বিশ্বাস, এই রাবনের দেহের মাটি ঘরে নিয়ে গিয়ে রাখলে অশুভ শক্তির হাত থেকে ঘরকে রক্ষা করা যায়।
এক সময় মল্লরাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় এই রাবন কাটা নৃত্য দল তৈরী হয়েছিল। প্রায় চারশো বছরের প্রাচীন এই নৃত্যশৈলী এখন রাঢ় বঙ্গের লোক নৃত্যের শিরোপা অর্জন করেছে। তবে, বর্তমানে মল্লরাজাদের রাজ্যপাট না থাকায় আর রাজ উপঢৌকন মেলেনা এই নৃত্য শিল্পীদের। তাই নাচ নেচে লোকজনের অনুদান,আর বকশিসই নামমাত্র রোজগারের একমাত্র ভরসা। তবুও ঐতিহ্য কে টিকিয়ে রাখতে বিজয়া দশমী থেকে দ্বাদশী এই তিন দিন সারা বিষ্ণুপুর জুড়ে রাবন কাটা নাচ প্রদর্শন করেন সুকুমার,নারাণ, মিঠুন ও রঞ্জিতরা।
হনুমান,জাম্বুবান,সুগ্রীব, বিভীষণ সেজে নাকাড়া,টিকারা,ঝাঁঝ আর কাঁসির তালে দুয়ারে দুয়ারে নেচে,নেচে পরিক্রমার পোশাকি নামই হল রাবণকাটা নৃত্য। এই নাচের দলে থাকেন মোট ৯ জন। তাদের মধ্যে ৪ জন হলেন নৃত্যশিল্পী। আর বাকীরা সহযোগী।এই নাচের দলে হনুমান সাজেন সুকুমার অধিকারী, জাম্বুবান নারাণ বারিক, সুগ্রীব মিঠুন লোহার এবং বিভীষণ সাজেন রঞ্জিত গরাই। নাকাড়া,টিকারা,ঝাঁঝ, কাঁসি এমন নানা বাদ্যযন্ত্রে বোল তোলেন সনাতন ধাড়া,শ্যামাপদ পন্ডিত,মধুসূদন কালিন্দি ও তারাপদ ধাড়া।আর দলের ম্যানেজার হিসেবে সাথে থাকেন জয়দেব দত্ত।
নৃত্যশিল্পীদের পরনে থাকে পাটের তৈরি বিশেষ লোমশ পোশাক। মাথায় গামার কাঠের তৈরী বিশেষ মুখোশ। এই বেশেই প্রথম বিজয়া অর্থাৎ দশমীতে মেঘনাদ বধ,পরের দিন একাদশীতে কুম্ভকর্ণ এবং শেষ বিজয়া অর্থাৎ দ্বাদশীতে হয় রাবন বধ। রধুনাথজীউয়ের মন্দির প্রাঙ্গণে আজ বৃহঃস্পতিবার মধ্যরাতে রাবন কাটা দেখতে ভীড় জমাবেন হাজার,হাজার মানুষ।
এই অভিনব নাচ একদা রাজস্থান থেকে আসা বিষ্ণুপুরের রাজ পরিবারের পূর্ব পুরুষের হাত ধরে বাংলায় শুরু হয়েছিল। কিন্তু এই নাচ নেচে বছরের ১২ মাস পেট চলে না শিল্পীদের। পুজোর মরসুমের এই তিন দিন ছাড়া অন্যসময় শিল্পীদের কেও রিক্সা চালান,বা কেও আইসস্ক্রিম বেচেন বা অন্য পেশায় যুক্ত হন।
নুতন প্রজন্মও রোজকার নেই বলে এই নাচকে পেশা হিসেবে না নেওয়ায় নাচের ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন খোদ শিল্পীরাই! তারা দাবী তুলেছেন, রাজা নেই তো কি হয়েছে! রাজ্য সরকার এই নাচ কে বাঁচিয়ে রাখতে সহায়তার হাত বাড়াক। তাহলেই বেঁচে থাকএ রাঢ় বাংলার এই অভিনব রাবন কাটা নাচ।
#দেখুন 🎦 ভিডিও। 👇[embed]